সাইয়েদুল ইস্তেগফার হল তাওবা করার শ্রেষ্ঠ দোয়া । সাইয়িদুল ইস্তিগফার এর বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত জানতে এই পোস্ট পড়ুন। এখানে সাইয়েদুল ইস্তেগফার দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছ।
মানুষের স্বভাব হল ভুল করা। প্রতিদিন আমরা ছোট-বড় ভুল করে থাকি, কখনো বুঝে কখনো না বুঝে। অনেক সময় আমরা জেনে-বুঝেই পাপ করে ফেলি। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তাঁর বান্দাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দেন। তাই আমাদের উচিত, যতই ভুল করি না কেন, তাওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত, ৮২)
আরেক আয়াতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’
(সূরা নিসা, আয়াত, ১১০)
সাইয়েদুল ইস্তেগফার | তাওবা করার শ্রেষ্ঠ দোয়া | Sayyidul Istighfar Dua
Table of Contents
ইস্তেগফার কি?
ইস্তেগফার শব্দের অর্থ ক্ষমা চাওয়া, আর তাওবা হলো আল্লাহর পথে ফিরে আসা। এটি ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। মানুষ প্রতিদিন ছোট-বড় ভুল করে থাকে। এই ভুলগুলিকে ক্ষমা করার জন্য আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করা উচিত।
ইস্তেগফার করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি পাপ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে, আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সাহায্য করে, দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ দূর করতে সাহায্য করে, এবং রহমত ও বরকত লাভ করতে সাহায্য করে।
ইস্তেগফার করার অনেক উপায় রয়েছে। নিচে কিছু সাধারণ উপায় দেওয়া হল:
ইস্তেগফার কিভাবে করবেন?
- “আস্তাগফিরুল্লাহ” বলা। এটি হল ইস্তেগফারের সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত উপায়।
- “আস্তাগফিরুল্লাহ আল-হাইয়্যুল কইয়্যূম” বলা। এটি হল সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার, অর্থাৎ সবচেয়ে উত্তম ইস্তেগফার।
- আল্লাহর কাছে নিজের ভুলের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ভবিষ্যতে সেই ভুলগুলি না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
আরও পড়ুন ইস্তেগফার কি? ইস্তেগফার কিভাবে করবেন? ইস্তেগফার এর ফজিলত
সাইয়েদুল ইস্তেগফার কি?
সাইয়েদুল ইস্তেগফার হল তাওবা করার শ্রেষ্ঠ দোয়া। এই দোয়াটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ফজিলত অনেক। এই দোয়াটি পাঠ করলে আল্লাহ তায়ালা বান্দার সব গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি যদি গুনাহ সমুদ্রের ফেনার মতোও হয়।
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সায়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায় তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সায়্যিদুল ইস্তিগফার পড়ে সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
-সহিহ বোখারি: ৬৩০৬
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ | Sayyidul istighfar dua bangla
আল্লাহুম্মা আংতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাক্কতানী ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজু বিকা মিন শার্রি মা ছানাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ লাকা বিযুনবি, ফাগফিরলী, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আন্তা
সাইয়েদুল ইস্তেগফার এর অর্থ: | Sayyidul Istighfar Bangla Ortho
হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব, তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ এবং আমি তোমার বান্দা। আমি যথাসাধ্য তোমার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমি তোমার দান-অনুগ্রহের স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমার অপরাধের স্বীকারোক্তি করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। কারণ তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।
সাইয়িদুল ইস্তিগফার হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে প্রমাণিত একটি দোয়া। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি এই দোয়াটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পাঠ করবে, সে যদি দিনের বেলা পাঠ করে রাতে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলা পাঠ করে দিনের বেলা মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (বুখারি ও মুসলিম)
আরও পড়ুন আস্তাগফিরুল্লাহ দোয়া: অর্থ ও উপকারিতা জেনে নিন | Astaghfirullah Meaning In Bengali
সাইয়েদুল ইস্তেগফার সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হওয়ার কারণ:
- এটি আল্লাহর গুণাবলী বর্ণনা করে, যা আমাদেরকে আল্লাহর ক্ষমতা ও দয়ার স্মরণ করিয়ে দেয়।
- এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করতে শেখায়।
- এটি আমাদেরকে আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার আশা জাগিয়ে তোলে।
সাইয়্যিদুল ইস্তেগফারটি প্রতিদিন সকাল-বিকাল সাতবার পড়ার সুন্নাহ রয়েছে। এছাড়াও, কোনো পাপ করার পরে অবিলম্বে সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পড়া উচিত।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করার কিছু উপকারিতা হলো:
- এটি একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দোয়া।
- এটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির গুনাহ মাফ করে দেন।
- এটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে তাঁর রহমত ও করুণায় ঢেকে দেন।
- এটি পাঠ করলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করান।
- সাইয়িদুল ইস্তিগফার প্রত্যেক মুসলমানের জন্য প্রতিদিন পাঠ করা উচিত। এটি পাঠ করলে আমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে ক্ষমা ও রহমত লাভ করতে পারি।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার আরবী | Sayyidul Istighfar in Arabic Text
সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হলো ক্ষমা প্রার্থনার একটি শ্রেষ্ঠ দোয়া। এই দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
সাইয়িদুল ইস্তিগফার শ্রেষ্ঠ দোয়া হলো:
اَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّىْ لآ إِلهَ إلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِىْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُبِكَ مِنْ شَرِّمَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَىَّ وَأَبُوْءُ بِذَنْبِىْ فَاغْفِرْلِىْ، فَإِنَّهُ لاَيَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلاَّ أَنْتَ-
Sayyidul Istighfar English
সাইয়িদুল ইস্তেগফার এর হাদিস | Sayyidul Istighfar Hadith
রাসূলুল্লাহ (স) বলেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দোআ পাঠ করবে, দিনে পাঠ করে রাতে মারা গেলে কিংবা রাতে পাঠ করে দিনে মারা গেলে, সে জান্নাতী হবে।
(বুখারী, মিশকাত)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন একজন নিষ্পাপ মানুষ। কিন্তু তিনিও প্রতিদিন শত বার তওবা বা আসতাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেন। তিনি বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করে, আল্লাহ তার সব গুনাহ মাফ করে দেন, যদিও সে সমুদ্রের ফেনার মতো গুনাহ করে থাকে।”
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়া:
আসতাগফিরুল্লাহ দোয়ার অর্থ হলো, “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।” এই দোয়াটি আমরা প্রতিদিন পাঠ করতে পারি।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা | Sayyidul Istighfar in bengali
Sayyidul Istighfar English Transliteration
“Allahumma anta Rabbii laa ilaaha illaa anta, Khalaq-tanii wa ana ‘Abduka, wa ana a’la a’hdika wa wa’dika mastata’tu, a’udhu bika min sharri maa sana’tu, abuo-u laka bini’matika a’laiya, wa abuo-u laka bidhanbii faghfirli, fa innahuo laa yaghfiru-dhunouba illaa anta.”
Sayyidul Istighfar English
সাইয়িদুল ইস্তেগফার pdf | Sayyidul Istighfar bangla pdf
Sayyidul Istighfar Bangla Photo | সাইয়েদুল ইস্তেগফার ছবি
উপসংহার:
আমরা সবাই মানুষ, আর মানুষ ভুল করে। প্রতিদিন আমরা অনেক ছোট-বড় ভুল করি। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবেছি যে আমরা দিনে কত গুনাহ করি?
আমরা দিনে যেসব গুনাহ করি তার মধ্যে রয়েছে:
- মিথ্যা বলা
- গীবত করা
- পরনিন্দা করা
- ঝগড়া করা
- গালাগালি করা
- চুরি করা
- প্রতারণা করা
- ইত্যাদি।
এই গুনাহগুলো আমরা অজান্তেই করে ফেলি। কিন্তু আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে এই গুনাহগুলো থেকে দূরে থাকতে পারি।
আমরা সবাই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।