
রবীন্দ্রনাথের “বোঝাপড়া” কবিতা: জীবনের বাস্তবতা বোঝার শিক্ষা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের এক মহান কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং সমাজসেবী। তাঁর রচিত কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক এবং প্রবন্ধ বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর রচিত “বোঝাপড়া” কবিতাটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটি আমাদের জীবনের বাস্তবতা বোঝার এবং সহনশীলতার শিক্ষা দেয়।
বোঝাপড়া কবিতার ব্যাখ্যা | বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর
বোঝাপড়া কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
কেউ বা তোমায় ভালোবাসে
কেউ বা বাসতে পারে না যে,
কেউ বিকিয়ে আছে, কেউ বা
সিকি পয়সা ধারে না যে,
কতকটা যে স্বভাব তাদের
কতকটা বা তোমারো ভাই,
কতকটা এ ভবের গতিক–
সবার তরে নহে সবাই।
তোমায় কতক ফাঁকি দেবে
তুমিও কতক দেবে ফাঁকি,
তোমার ভোগে কতক পড়বে
পরের ভোগে থাকবে বাকি,
মান্ধাতারই আমল থেকে
চলে আসছে এমনি রকম–
তোমারি কি এমন ভাগ্য
বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
অনেক ঝঞ্ঝা কাটিয়ে বুঝি
এলে সুখের বন্দরেতে,
জলের তলে পাহাড় ছিল
লাগল বুকের অন্দরেতে,
মুহূর্তেকে পাঁজরগুলো
উঠল কেঁপে আর্তরবে–
তাই নিয়ে কি সবার সঙ্গে
ঝগড়া করে মরতে হবে?
ভেসে থাকতে পার যদি
সেইটে সবার চেয়ে শ্রেয়,
না পার তো বিনা বাক্যে
টুপ করিয়া ডুবে যেয়ো।
এটা কিছু অপূর্ব নয়,
ঘটনা সামান্য খুবই–
শঙ্কা যেথায় করে না কেউ
সেইখানে হয় জাহাজ-ডুবি।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
তোমার মাপে হয় নি সবাই
তুমিও হও নি সবার মাপে,
তুমি মর কারো ঠেলায়
কেউ বা মরে তোমার চাপে–
তবু ভেবে দেখতে গেলে
এমনি কিসের টানাটানি?
তেমন করে হাত বাড়ালে
সুখ পাওয়া যায় অনেকখানি।
আকাশ তবু সুনীল থাকে,
মধুর ঠেকে ভোরের আলো,
মরণ এলে হঠাৎ দেখি
মরার চেয়ে বাঁচাই ভালো।
যাহার লাগি চক্ষু বুজে
বহিয়ে দিলাম অশ্রুসাগর
তাহারে বাদ দিয়েও দেখি
বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
নিজের ছায়া মস্ত করে
অস্তাচলে বসে বসে
আঁধার করে তোল যদি
জীবনখানা নিজের দোষে,
বিধির সঙ্গে বিবাদ করে
নিজের পায়েই কুড়ুল মার,
দোহাই তবে এ কার্যটা
যত শীঘ্র পার সারো।
খুব খানিকটে কেঁদে কেটে
অশ্রু ঢেলে ঘড়া ঘড়া
মনের সঙ্গে এক রকমে
করে নে ভাই, বোঝাপড়া।
তাহার পরে আঁধার ঘরে
প্রদীপখানি জ্বালিয়ে তোলো–
ভুলে যা ভাই, কাহার সঙ্গে
কতটুকুন তফাত হল।
মনেরে তাই কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।
বোঝাপড়া কবিতার মূলভাব:
কবিতায় কবি বলেছেন যে, জীবনে ভালো-মন্দ সব কিছুই আসবে। তাই এসবকে সহজভাবে মেনে নেওয়া উচিত। কারো ভালোবাসা যদি পাওয়া না যায়, তাহলে তাতে মন খারাপ করা উচিত নয়। কারণ, কারো ভালোবাসা পাওয়া বা না পাওয়া তার নিজের স্বভাব বা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। আবার, কারো কাছ থেকে ফাঁকি বা অন্যায় পেলেও তাতে রাগ বা দুঃখ করা উচিত নয়। কারণ, এসব ঘটনা মান্ধাতার আমল থেকেই চলে আসছে। তাই এসবকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
বোঝাপড়া কবিতায় কবি কোন কোন মূল্যবোধের কথা বলেছেন?
কবিতায় কবি যেসব মূল্যবোধের কথা বলেছেন সেগুলো হলো:
- জীবনের বাস্তবতা বোঝা
- সহনশীলতা
- ধৈর্য
- মানবিকতা
কবিতায় কবির কোন কোন ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে?
কবিতায় কবির যেসব ভাবনা প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো হলো:
- জীবনে ভালো-মন্দ সব কিছুই আসবে
- কারো ভালোবাসা পাওয়া বা না পাওয়া তার নিজের স্বভাব বা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে
- জীবনে অন্যায় বা ফাঁকি সবসময়ই থাকবে
- কারো প্রতি অন্যায় করা উচিত নয়
বোঝাপড়া কবিতার PDF
ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বোঝাপড়া” কবিতা
উপসংহার:
রবীন্দ্রনাথের “বোঝাপড়া” কবিতাটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবিতা। এই কবিতাটি আমাদের জীবনের বাস্তবতা বোঝার এবং সহনশীলতার শিক্ষা দেয়। এই শিক্ষা আমাদের জীবনকে সুন্দর এবং সুখী করে তুলতে সাহায্য করবে।
বোঝাপড়া কবিতার প্রশ্নোত্তর
বোঝাপড়া কবিতার মূলভাব কী?
জীবনের বাস্তবতা বোঝা এবং সহনশীলতা
বোঝাপড়া কবিতার কবি কে?
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবিতায় কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
কবিতায় কবি জীবনের বাস্তবতা বোঝার এবং সহনশীলতার শিক্ষা দেন। তিনি বলেন যে, জীবনে ভালো-মন্দ সব কিছুই আসবে। তাই এসবকে সহজভাবে মেনে নেওয়া উচিত। কারো ভালোবাসা যদি পাওয়া না যায়, তাহলে তাতে মন খারাপ করা উচিত নয়। কারণ, কারো ভালোবাসা পাওয়া বা না পাওয়া তার নিজের স্বভাব বা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। আবার, কারো কাছ থেকে ফাঁকি বা অন্যায় পেলেও তাতে রাগ বা দুঃখ করা উচিত নয়। কারণ, এসব ঘটনা মান্ধাতার আমল থেকেই চলে আসছে। তাই এসবকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
কবিতায় কবি কারো ভালোবাসা পাওয়া না গেলে কী করতে বলেছেন?
কবিতায় কবি কারো ভালোবাসা পাওয়া না গেলে মন খারাপ না করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, কারো ভালোবাসা পাওয়া বা না পাওয়া তার নিজের স্বভাব বা ভাগ্যের উপর নির্ভর করে। তাই এতে মন খারাপ করা উচিত নয়।
কবিতায় কবি কারো কাছ থেকে ফাঁকি বা অন্যায় পেলে কী করতে বলেছেন?
কবিতায় কবি কারো কাছ থেকে ফাঁকি বা অন্যায় পেলেও তাতে রাগ বা দুঃখ না করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, এসব ঘটনা মান্ধাতার আমল থেকেই চলে আসছে। তাই এসবকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিত।