মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি, ১৮২৪ – ২৯ জুন, ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি, নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা। তিনি বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্ম বাংলাদেশের যশোর জেলার সাগরদাঁড়ী গ্রামে। তিনি ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তাঁর পিতা ঠাকুরদাস দত্ত একজন ব্রাহ্ম সমাজের ধর্মীয় নেতা ছিলেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর পিতামাতার দশম সন্তান ছিলেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন ইংরেজি রচনা দিয়ে। তিনি ১৮৪৭ সালে তাঁর প্রথম ইংরেজি কবিতা “কবিতা” প্রকাশ করেন। তিনি ১৮৪৯ সালে তাঁর প্রথম ইংরেজি উপন্যাস “দ্য ট্র্যাজেডি অব চন্দ্রাবলী” প্রকাশ করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৫৭ সালে তাঁর প্রথম বাংলা কবিতা “কবিতাবলী” প্রকাশ করেন। এই কাব্যগ্রন্থে তিনি বাংলা সাহিত্যে নতুন ছন্দ ও ভাষার প্রবর্তন করেন। তিনি তাঁর “শর্মিষ্ঠা” নাটকে (১৮৫৯) প্রথম সনেট ও “মেঘনাদবধ কাব্য” (১৮৬১) মহাকাব্যে প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলির মধ্যে রয়েছে “কবিতাবলী”, “শর্মিষ্ঠা”, “মেঘনাদবধ কাব্য”, “চিত্রাঙ্গদা”, “পদ্মাবতী”, “কৃষ্ণকুমারী”, “প্রহসন” এবং “শেষের কবিতা”।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮৭৩ সালে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি তাঁর সাহিত্যকর্মের জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তিনি বাংলা সাহিত্যের অমর পুরুষ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
- নব্যরীতি প্রবর্তন: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে বাংলা সাহিত্যে নতুনত্বের প্রবর্তন করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাবকে গ্রহণ করেন এবং বাংলা সাহিত্যে নতুন ছন্দ, ভাষা, ভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রবর্তন করেন।
- বিদ্রোহী চেতনা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একজন বিদ্রোহী কবি। তাঁর সাহিত্যে তিনি সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন।
- মানবতাবাদ: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন একজন মানবতাবাদী। তাঁর সাহিত্যে তিনি মানুষের প্রেম, ভালোবাসা, দুঃখ, আনন্দ, আশা-নিরাশার চিত্র ফুটে তুলেছেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্যের প্রভাব
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্য বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি বিশ্বসাহিত্যকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর সাহিত্য ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। তিনি বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্তের সাহিত্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। তাঁর সাহিত্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে অসামান্য অবদান রেখেছে।