যাকাত কি ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম জানতে আমাদের এই পোস্টটি পড়ুন এখানে যাকাত ও যাকাত দেওয়ার নিয়ম বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে।
যাকাত হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যাকাত হল সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ যা আল্লাহ তাআলার নির্দেশে গরীব-মিসকিনদের মধ্যে দান করা হয়। যাকাত দানকারীর আর্থিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে।
Table of Contents
যাকাত শব্দের অর্থ কি
যাকাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো পবিত্রতা, বরকত, বৃদ্ধি ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায়, যাকাত হলো সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ, যা আল্লাহর নির্দেশে গরীব-মিসকিনদের মধ্যে দান করা হয়। যাকাত দানকারীর আর্থিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে।
যাকাত কাদের ওপর ফরজ
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ হতে হবে:
- ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।
- বয়স্ক হতে হবে।
- সুস্থ হতে হবে।
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে।
Calculate your Zakat using Our Tools : Zakat Calculator BD
যাকাতের হিসাব
যাকাতের হিসাব হল সেই সম্পদের ন্যূনতম পরিমাণ যার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। যাকাতের নিসাব হল:
- সোনা: ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম)
- রূপা: ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)
- ব্যবসায়িক পণ্য: মূল্যমানের ৮৫%
- নগদ অর্থ: মূল্যমানের ৮৫%
- যাকাতের হার
যাকাতের হার হল সেই শতকরা হার যা নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর দিতে হয়। যাকাতের হার হল:
- সোনা ও রূপা: ২.৫%
- ব্যবসায়িক পণ্য ও নগদ অর্থ: ২.৫%
যাকাতের হিসাব করার জন্য নিম্নলিখিত সূত্র ব্যবহার করা হয়:
যাকাত = (সম্পদের পরিমাণ) * (যাকাতের হার)
যাকাত দেওয়ার নিয়ম ২০২৪
যাকাত দেওয়ার নিয়ম নিম্নরূপ:
- যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর এক বছর অতিবাহিত হওয়া
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা
- যাকাত দেওয়ার নিয়ত করা
- যাকাত দেওয়ার জন্য সচ্ছল হওয়া
- যাকাত দেওয়ার সম্পদ হালাল হওয়া
যাকাত কাকে দেওয়া যাবে
যাকাত নিম্নলিখিত আট শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়:
- ফকির (দরিদ্র)
- মিসকিন (অভাবী)
- আমিল (যাকাত সংগ্রহ ও বন্টনকারী)
- মুআল্লাফ (নবমুসলিম)
- রিকাব (দাস)
- গারিম (ঋণগ্রস্ত)
- ফি সবিলিল্লাহ (আল্লাহর পথে যুদ্ধরত)
- ইবনেস সাবিল (পথিকৃৎ)
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য নিম্নলিখিত শর্তগুলি পূরণ হতে হয়:
- মুসলমান হওয়া
- বালেগ হওয়া
- সুস্থ হওয়া
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা
যাকাতের খাতগুলো কি কি
যাকাতের খাতগুলো নিম্নরূপ:
- ফকির: যারা খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয় ও চিকিৎসার মতো মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসও জোগাড় করতে পারে না
- মিসকিন: যারা মৌলিক প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি জোগাড় করতে পারে, কিন্তু তাদের জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন
- আমিল: যাকাত সংগ্রহ ও বন্টনকারী
- মুআল্লাফ: যারা সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেছে
- রিকাব: যারা দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে চায়
- গারিম: যারা ঋণে জর্জরিত
যাকাতের ফজিলত
যাকাতের অনেক ফজিলত রয়েছে। যাকাত দানকারীর জন্য নিম্নলিখিত ফজিলত রয়েছে:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন
- সম্পদের বরকত বৃদ্ধি
- জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ হওয়া
- গরীব-মিসকিনদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা
- সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা
যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
যাকাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। যাকাত হলো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। যাকাত দানকারীর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতি সাধন করে। যাকাত দানকারীর সম্পদ পবিত্র হয় এবং সমাজে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।
যাকাত দানের নিমিত্তে আল্লাহ তাআলার কিছু বাণী
আল্লাহ তাআলা বলেন, “সালাত কায়েম কর এবং যাকাত দাও, আল্লাহর কাছে যা কিছু ধার করেছ তা পূর্ণ কর।” (সূরা আল-বাকারা: ২৭৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা নিজেদের ধন-সম্পদের হক আদায় করে এবং যাকাত দেয়, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট একটি পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় বা দুঃখ থাকবে না।” (সূরা আল-রূম: ৩৮-৩৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা যাকাত দেয়, তারা হলেন সফলকাম।” (সূরা আল-মুমিনুন: ১-২)
যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য
যাকাত ও ফিতরার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। যাকাত ও ফিতরার পার্থক্য নিম্নরূপ:
বৈশিষ্ট্য | যাকাত | ফিতরাহ |
---|---|---|
অর্থ | সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করা | নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য দান করা |
উদ্দেশ্য | গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করা | ঈদের নামাজের আগে গরীব-মিসকিনদের সাহায্য করা |
দেওয়ার সময় | বছরের যেকোনো সময় | রমজানের শেষ দিন সূর্যাস্তের পর থেকে ঈদের নামাজের আগের দিন সূর্যাস্তের আগে |
দেওয়ার পরিমাণ | সম্পদের নিসাব অনুযায়ী | ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে |
দেওয়ার খাত | আটটি খাত | গরীব-মিসকিনরা |
যাকাতের হিসাব ক্যালকুলেটর | যাকাত ক্যালকুলেটর ২০২৪
যাকাত ক্যালকুলেটর হল একটি অনলাইন টুল যা ব্যবহারকারীদের তাদের সম্পদের যাকাত কতটুকু হবে তা সহজেই গণনা করতে সহায়তা করে। যাকাত ক্যালকুলেটর ব্যবহার করার জন্য, ব্যবহারকারীদের নিম্নলিখিত তথ্য প্রদান করতে হবে:
যাকাতের হিসাব করার জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপ রয়েছে। এই ওয়েবসাইট ও অ্যাপগুলিতে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার শর্তাবলী পূরণ হলে যাকাত কত দিতে হবে তা সহজেই হিসাব করা যায়।
যাকাত সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত ২০২৩
২০২৩ সালে ১ ভরি স্বর্ণের যাকাত হলো ৩,৫০০ টাকা।
১০ ভরি সোনার যাকাত কত
১০ ভরি সোনার যাকাত হলো ৩৫,০০০ টাকা।
কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয়
যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হয়। ২০২৩ সালে নিসাব পরিমাণ সোনা হলো ৭.৫ তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) এবং রূপা হলো ৫২.৫ তোলা (৬১২.৩৬ গ্রাম)।
শতকরা কত টাকা যাকাত দিতে হয়
যাকাতের হার হলো ২.৫%। তাই সম্পদের নিসাব পরিমাণ সম্পদের ২.৫% যাকাত দিতে হয়।
যাকাত এবং ফিতরাহ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন: যাকাত কি?
উত্তর: যাকাত হলো নির্দিষ্ট কিছু ধরনের সম্পদ, যেমন সোনা, রূপা, নগদ অর্থ এবং ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর প্রদত্ত একটি বাধ্যতামূলক কর। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি এবং গরীব-মিসকিনকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন: যাকাত কারা পেতে পারে?
উত্তর: যাকাত নিম্নলিখিত আট শ্রেণীর মানুষকে দেওয়া যেতে পারে:
- ফকির (দরিদ্র)
- মিসকিন (অভাবী)
- আমিল (যাকাত সংগ্রহ ও বন্টনকারী)
- মুআল্লাফ (নবমুসলিম)
- রিকাব (দাস)
- গারিম (ঋণগ্রস্ত)
- ফি সবিলীল্লাহ (আল্লাহর পথে যুদ্ধরত)
- ইবনেস সাবিল (পথিকৃৎ)
প্রশ্ন: যাকাত কিভাবে গণনা করা হয়?
উত্তর: যাকাতের পরিমাণ সম্পদের ধরন এবং এর মূল্যের উপর নির্ভর করে গণনা করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সোনা ও রূপার যাকাতের হার ২.৫%।
প্রশ্ন: আমি কিভাবে যাকাত দিতে পারি?
উত্তর: যাকাত সরাসরি গরীব-মিসকিনকে দেওয়া যেতে পারে, অথবা যাকাত সংগ্রহকারী সংস্থাকে দেওয়া যেতে পারে। যাকাত সংগ্রহকারী সংস্থাগুলি যাকাত যোগ্য লাভীদের মধ্যে বন্টন করার জন্য দায়ী।
প্রশ্ন: ফিতরাহ কি?
উত্তর: ফিতরাহ হলো রমজান মাসে মুসলিম পরিবারের প্রতিটি সদস্যের পক্ষ থেকে দেয়া একটি দাতব্য। এটি সম্পদকে পবিত্র করার এবং গরীব-মিসকিনকে ঈদুল ফিতর উদযাপনে সহায়তা করার একটি উপায়।
প্রশ্ন: ফিতরাহ কারা পেতে পারে?
উত্তর: যাকাত পেতে যারা যোগ্য তাদেরই ফিতরাহ দেয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন: ফিতরাহ কিভাবে গণনা করা হয়?
উত্তর: ফিতরাহ মূল্যায়ন করা হয় একটি মূল খাদ্যশস্যের দামের উপর ভিত্তি করে, যেমন চাল বা গম। ফিতরাহর পরিমাণ দেশ ও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন: আমি কিভাবে ফিতরাহ দিতে পারি?
উত্তর: ফিতরাহ সরাসরি গরীব-মিসকিনকে দেওয়া যেতে পারে, অথবা যাকাত সংগ্রহকারী সংস্থাকে দেওয়া যেতে পারে। যাকাত সংগ্রহকারী সংস্থাগুলি যোগ্য লাভীদের মধ্যে ফিতরাহ বন্টন করার জন্য দায়ী।
প্রশ্ন: যাকাত এবং ফিতরাহর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: যাকাত এবং ফিতরাহের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল যাকাত একটি বাধ্যতামূলক কর, যখন ফিতরাহ একটি স্বেচ্ছাসেবী দাতব্য। এছাড়াও যাকাত বিভিন্ন ধরনের সম্পদে প্রদত্ত হয়, যখন ফিতরাহ মূল খাদ্যশস্যের ওপর প্রদত্ত হয়।
প্রশ্ন: যাকাত কোন ভাষার শব্দ?
উত্তর: যাকাত হলো আরবি শব্দ। এর অর্থ হল “পবিত্রতা” বা “শুদ্ধতা”।
প্রশ্ন: বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়?
উত্তর: বর্তমানে ৫২.৫ তোলা (৬১২.১৫ গ্রাম) রুপার মূল্যের সমান সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়।
প্রশ্ন: ১ লাখ টাকায় যাকাত কত?
উত্তর: ২০২৩ সালে ১ লাখ টাকায় যাকাত ২৫০০ টাকা।
প্রশ্ন: যাকাতের নিসাব কত টাকা ২০২২?
উত্তর: ২০২২ সালে যাকাতের নিসাব ছিল ৪৪ হাজার ৭৫ টাকা।
প্রশ্ন: কুরআনে যাকাত শব্দটি কতবার এসেছে?
উত্তর: কুরআনে যাকাত শব্দটি ৩২ বার এসেছে।
প্রশ্ন: নগদ টাকার যাকাতের হিসাব ২০২৩?
উত্তর: ২০২৩ সালে নগদ টাকার যাকাতের হার হল ২.৫%। অর্থাৎ, কারো কাছে যদি ১ লাখ টাকা নগদ অর্থ থাকে, তাহলে তার যাকাত হবে ২৫০০ টাকা।
প্রশ্ন: কত গ্রাম স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়?
উত্তর: সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম) স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়।
উপসংহার
যাকাত ও ফিতরাহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী বিধান। যাকাত ও ফিতরাহ দানকারীর আধ্যাত্মিক ও সামাজিক উন্নতি সাধন করে।