রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাট কবিতার প্রশ্ন উত্তর জানতে এই পোস্টটি পড়ুন। এখানে হাট কবিতা , তার ব্যাখ্যা ও প্রশ্ন উত্তর নীচে দেয়া হল।।
হাট কবিতা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কুমোর-পাড়ার গরুর গাড়ি ,
বোঝাই করা কলসি হাঁড়ি ।
গাড়ি চালায় বংশীবদন ,
সঙ্গে যে যায় ভাগ্নে মদন ।
হাট বসেছে শুক্রবারে,
বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে ।
জিনিসপত্র জুটিয়ে এনে,
গ্রামেন মানুষ বেচে কেনে ।
উচ্ছে বেগুন পটল মুলো ,
বেতের বোনা ধামা কুলো |
সর্ষে ছোলা ময়দা আটা ,
শীতের র্যাপার নক্সাকাটা ।
ঝাঁঝরি করা বেড়ি হাতা ,
শহর থেকে সস্তা ছাতা ।
কলসি-ভরা এখো গুড়ে
মাছি যত বেড়ায় উড়ে ।
খড়ের আঁটি নৌকো বেয়ে,
আনলো ঘাটে চাষির মেয়ে ।
অন্ধ কানাই পথের ‘পরে ,
গান শুনিয়ে ভিক্ষে করে ।
পাড়ার ছেলে স্নানের ঘাটে
জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে ।
হাট কবিতা :
হাট কবিতাটি লিখেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই কবিতাটিতে একটি হাটের বর্ণণা
দিয়েছেন কবি। হাট হচ্ছে একটি খোলা বাজার যেটি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে এবং
জায়গায় বসে। এই কবিতায় হাট শুক্রবারে, বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে বসে। বংশীবদন গোরুর
গাড়ি চালিয়ে তাতে কলসি হাঁড়ি বোঝাই করে হাটে নিয়ে যায়। তার সঙ্গে যায় ভাগ্নে
মদন। গ্রামের মানুষ বিভিন্ন রকমের সব্জী, রান্নাঘরের ব্যবহার করবার বাসনপত্র, অন্যান্য
থাবার, শহর থেকে আনা সস্তা ছাতা, আখের গুড় ইত্যাদি এনে বিক্রি করে। চাষীর মেয়ে
নৌকো করে খড়ের আঁটি নিয়ে আসে। অন্ধ কানাই সেখানে গান গেয়ে ভিক্ষে করে।
পাড়ার ছেলেরা জল ছিটিয়ে সাঁতার কাটে।
হাট কবিতা প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখো :
ক) কুমোর পাড়ার গোরুর গাড়ি কী দিয়ে বোঝাই করা ?
থ) কে গাড়ি চালায় ?
গ) কে সঙ্গে যায় ?
ঘ) কবে কোথায় হাট বসেছে ?
ঙ) হাটে কী কী সব্জী পাওয়া যাচ্ছে ?
চ) শহর থেকে কী এনে বিক্রি করছে ?
ছ) রান্না ঘরের কী কী জিনিস হাটে পাওয়া যাচ্ছে?
জ) এথো গুড়ের ওপর কী উড়ে বেড়ায় ?
ঝ) পথের ওপরে কে গান শোনায় ও কেন ?
ঞ) পাড়ার ছেলেরা কী করে ?
হাট কবিতার ব্যাখ্যা:
এই কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রামীণ জীবনের এক চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি একটি গরু গাড়ির মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের সরলতা ও সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কবিতাটির প্রথম ছত্রে বলা হয়েছে যে, কুমোর পাড়ার একটি গরুর গাড়ি গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। গাড়ির মাথায় একটি ঘণ্টা ঝুলছে, যা টানটান শব্দে বাজছে।
দ্বিতীয় ছত্রে বলা হয়েছে যে, গাড়ির মাঝখানে একজন কুমারের ছেলে বসে আছে। তার হাতে একটি বেলুন রয়েছে। সে বেলুনটি ফুটিয়ে উড়িয়ে দেয়।
তৃতীয় ছত্রে বলা হয়েছে যে, গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছোট্ট মেয়ে। তার হাতে একটি পুতুল রয়েছে। সে পুতুলটিকে চুমু খায়।
চতুর্থ ছত্রে বলা হয়েছে যে, গাড়ি চলেছে চলেছে, গ্রাম থেকে গ্রামে। গাড়ির পিছনে ছুটে চলেছে গ্রামের সব ছেলেমেয়ে।
পঞ্চম ছত্রে বলা হয়েছে যে, গাড়ি চলেছে চলেছে, অস্তগামী সূর্যের দিকে। গাড়ির পিছনে ছুটে চলেছে গ্রামের সব স্বপ্ন।
এই কবিতায় গরু গাড়িটিকে একটি প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। গরু গাড়িটি গ্রামীণ জীবনের চলমানতা ও গতিশীলতাকে প্রকাশ করে। এটি গ্রামীণ মানুষের জীবনের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকেও তুলে ধরে।
হাট কবিতা– হাট কবিতা – কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি কবিতা | Kumor Para Gorur Gari Lyrics In Bengali
হাট কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১। কবিতার প্রথম লাইনে “দূরে দূরে গ্রামগুলিতে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কবিতার প্রথম লাইনে “দূরে দূরে গ্রামগুলিতে” বলতে কবি দূরের গ্রামগুলির অবস্থানকে বোঝাতে চেয়েছেন। হাট সাধারণত গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত হয়। এই গ্রামের আশেপাশের গ্রামগুলি থেকে মানুষ হাটে এসে কেনাকাটা করে। তাই কবি বলেছেন, “দূরে দূরে গ্রামগুলিতে”।
প্রশ্ন ২। “হাট” কবিতায় হাটের কী কী বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
উত্তর: “হাট” কবিতায় হাটের যেসব বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে সেগুলি হলো:
- হাট একটি প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ স্থান।
- হাটে বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে।
- হাটে কেনাকাটা, দরাদরির হট্টগোল, মানুষের ভিড়, আনন্দ-উল্লাস ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়।
- হাট একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র।
প্রশ্ন ৩। “হাট” কবিতায় দিন ও রাতের যে বিপরীতধর্মী দুটি ছবি ফুটে উঠেছে তার তাৎপর্য কী?
উত্তর: “হাট” কবিতায় দিন ও রাতের যে বিপরীতধর্মী দুটি ছবি ফুটে উঠেছে তার তাৎপর্য হলো:
- দিনের বেলায় হাট প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় হাট নির্জন হয়ে যায়।
- দিনের বেলায় হাটে মানুষের আনন্দ-উল্লাস থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় হাটে সেই আনন্দ-উল্লাস থাকে না।
- দিনের বেলায় হাট একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। কিন্তু রাতের বেলায় হাট সেই গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে।
প্রশ্ন ৪। “হাট” কবিতায় কবির জীবনদর্শন কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর: “হাট” কবিতায় কবির জীবনদর্শন হলো, জীবনের হাটে সকলেই নিজেদের দাম যাচাই করে। কেউ ক্রেতা পায়, কেউ পায় না। সমস্ত আন্তরিক সম্পর্কের গভীরেও এই ব্যবহারিক ও জাগতিক মূল্যবোধ কাজ করে। এই নিরিখেই আমরা চারপাশের মানুষেরও মূল্যায়ন করে থাকি।
প্রশ্ন ৫। “হাট” কবিতার মূলভাব কী?
উত্তর: “হাট” কবিতার মূলভাব হলো, হাট শুধুমাত্র একটি স্থান নয়, এটি একটি জীবনদর্শন। হাটের মাধ্যমে কবি জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। হাটের প্রাণবন্ততা, বিচিত্রতা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব, দিন ও রাতের বিপরীতধর্মী ছবি ইত্যাদির মাধ্যমে কবি জীবনের বিভিন্ন দিককে তুলে ধরেছেন।
হাট কবিতার প্রশ্ন উত্তর
প্রশ্ন ১. কবিতায় বর্ণিত হাট কোথায় বসত?
উত্তর: কবিতায় বর্ণিত হাট বক্সীগঞ্জে পদ্মাপারে বসত।
প্রশ্ন ২. হাটে কী কী পণ্য বিক্রি হতো?
উত্তর: হাটে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হতো, যেমন: ফলমূল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, চাল, ডাল, আটা, লবণ, তেল, সাবানের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, ছাতা, হাঁড়ি, কলসি, ঝাঁঝরি, এমনকি শহর থেকে আনা সস্তা ছাতাও বিক্রি হতো।
প্রশ্ন ৩. হাটের কোন দৃশ্য কবির মনে বিশেষভাবে দাগ কেটেছে?
উত্তর: কবির মনে হাটের কোন একটি দৃশ্য বিশেষভাবে দাগ কেটেছে তা বলা কঠিন। তবে, কবির মনে দাগ কেটেছে হাটের জীবন্ততা, বৈচিত্র্য এবং প্রাণশক্তির দৃশ্য। কবি হাটে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা, বিক্রেতাদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের ক্রয়-বিক্রয়ের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছেন।
প্রশ্ন ৪. কবি কেন হাটকে “জীবন্ত” বলেছেন?
উত্তর: কবি হাটকে “জীবন্ত” বলেছেন কারণ হাট একটি প্রাণবন্ত স্থান। সেখানে বিভিন্ন মানুষের আনাগোনা, বিক্রেতাদের হাঁকডাক, ক্রেতাদের ক্রয়-বিক্রয়ের দৃশ্যে হাট প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন ৫. কবি কেন হাটকে “বৈচিত্র্যময়” বলেছেন?
উত্তর: কবি হাটকে “বৈচিত্র্যময়” বলেছেন কারণ হাটে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বিক্রি হয় এবং বিভিন্ন ধরনের মানুষ আসে। হাটে গ্রামের মানুষ, শহরের মানুষ, ধনী-গরিব, সব শ্রেণির মানুষ আসে।
প্রশ্ন ৬. কবি কেন হাটকে “প্রাণশক্তির উৎস” বলেছেন?
উত্তর: কবি হাটকে “প্রাণশক্তির উৎস” বলেছেন কারণ হাট গ্রামের মানুষের জীবনে প্রাণশক্তি যোগায়। হাটে এসে মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনে, বিক্রেতারা তাদের পণ্য বিক্রি করে, ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সব মিলিয়ে হাট গ্রামের মানুষের জীবনে প্রাণশক্তির উৎস।
প্রশ্ন ৭. হাট কীভাবে গ্রামের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে?
উত্তর: হাট গ্রামের মানুষের জীবনে অনেকভাবে প্রভাব ফেলে। হাট গ্রামের মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সুযোগ করে দেয়। হাটে এসে মানুষ তাদের পণ্য বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতে পারে। হাটে বিভিন্ন ধরনের মানুষ এসে মিলিত হয়, যা গ্রামীণ সমাজে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে। হাট গ্রামের মানুষের জীবনকে আরও প্রাণবন্ত এবং আনন্দময় করে তোলে।
প্রশ্ন ৮. আধুনিক যুগে হাটের গুরুত্ব কী?
উত্তর: আধুনিক যুগে হাটের গুরুত্ব এখনও কমেনি। হাট এখনও গ্রামের মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে হাটে এখন আর আগের মতো ভিড় হয় না, তবে এখনও হাট গ্রামের মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রশ্ন ৯. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাট কবিতাটি কেন লিখেছেন?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্রামীণ জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসা পোষণ করতেন। তিনি গ্রামের মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে কবিতা লিখেছেন। হাট কবিতাটিতে তিনি গ্রামের হাটের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি হাটের জীবন্ততা, বৈচিত্র্য এবং প্রাণশক্তির প্রশংসা করেছেন।
প্রশ্ন ১০. হাট কবিতার মূল ভাব কী?
উত্তর: হাট কবিতার মূল ভাব হলো গ্রামের হাট গ্রামের মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হাট গ্রামের মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার সুযোগ করে দেয়, বিক্রেতাদের অর্থ উপার্জনের সুযোগ করে দেয়, এবং গ্রামীণ সমাজে সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করে।