বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ কি?

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর অর্থ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর অর্থ

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম একটি ইসলামি বাক্যাংশ যার অর্থ “পরম করুণাময়, অসীম দয়াবান আল্লাহর নামে”। এটি ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাক্যাংশগুলির মধ্যে একটি। এটি দিয়েই পবিত্র কুরআন শরিফের ১১৪টি সূরার মধ্যে নবম সূরা ব্যতিরেকে অন্য বাকি ১১৩টি সূরা শুরু করা হয়েছে। এছাড়া হাদিস থেকে জানা যায় ইসলামের নবি মুহাম্মাদ প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে এই বাক্যাংশটি বলতেন।

আবু হুরায়রা (রা.)–এর বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয়, তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ (বরকতশূন্য)।’ (মুসনাদে আহমাদ, ১৪/৩২৯)

কোন সূরাতে বিসমিল্লাহ নেই | বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয়

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম এর অর্থ কি?

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ একটি আরবি বাক্যবন্ধ; যুগল বাক্য। এর সরল বাংলা অর্থ, পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহতায়ালার নামে (শুরু করছি)। এ বাক্যে ‘শুরু করা’ ক্রিয়াটি উহ্য। এর উদ্দেশ্য যেকোনো ‘কাজ’ বা ‘আমল’ আল্লাহর নামে আরম্ভ করা।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আরবি লেখা

بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর গুরুত্ব

ইসলামে বিসমিল্লাহের গুরুত্ব অপরিসীম। বিসমিল্লাহ না বলার কারণে একটি হালাল খাদ্য হারাম হয়ে যেতে পারে, আবার বিসমিল্লাহ না বলার কারণে নিয়ত শুভ থাকলেও অনেক কর্মে বরকত না হওয়ায় অনেকসময় ব্যাক্তির অসন্মানিত হতে হয়।

কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হলে সে কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হতে থাকে। শয়তান সেখানে অবস্থান নিতে পারে না। মুহাম্মদের (সা.) কাছে প্রথম ওহী অবতরণের সময়ও এই বাক্য পড়ানো হয়েছিল।

বিসমিল্লাহ কখন বলতে হয়

বিসমিল্লাহের ব্যবহার ইসলামে ব্যাপকভাবে রয়েছে। প্রত্যেক ভালো কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন, খাবার খাওয়ার আগে, গোসল করার আগে, ওযু করার আগে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, নতুন কোনো কাজ শুরু করার আগে ইত্যাদি। এছাড়াও, অনেক মুসলিম বিসমিল্লাহকে একটি আশীর্বাদ বা প্রার্থনা হিসেবেও ব্যবহার করে।

বিসমিল্লাহের সৌন্দর্য

বিসমিল্লাহ একটি সুন্দর ও রহস্যময় বাক্যাংশ। এর অর্থ ও গুরুত্ব অপরিসীম। বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করছি এবং তাঁর সাহায্য ও রহমত কামনা করছি। বিসমিল্লাহ আমাদেরকে ভালো কাজ করতে এবং আল্লাহর পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।

বিসমিল্লাহ বলার কিছু দোয়া

  • বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম।
  • বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম, আল্লাহু আকবার।
  • বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম, আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহা।

বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে

খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়তে হবে:

بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ

উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহু

অর্থ: “খাবারের শুরুতে আল্লাহর নাম শেষেও আল্লাহর নাম।”

এছাড়াও, খাওয়া শেষে নিম্নলিখিত দোয়াটি পড়তে হবে:

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّيْ وَلاَ قُوَّةٍ

উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আত্ব’আমনি হাযা ওয়া রযক্বানীহি মিন গয়রি হাওলি মিননি ওয়ালা কুওয়াতাহ

অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এ খাবার খাওয়ালেন, এ রিজিক দান করলেন আমার কোনো প্রকার কষ্ট-মেহনত ছাড়া।”

বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে, খাবারের বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে, স্মরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়াটি পড়লে, খাবারের বরকত ফিরে আসে।

আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ

আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ দুটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামি বাক্যাংশ। আউযুবিল্লাহ বাক্যাংশটি “আমি আল্লাহর আশ্রয় চাই” অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিসমিল্লাহ বাক্যাংশটি “আল্লাহর নামে” অর্থে ব্যবহৃত হয়।

আউযুবিল্লাহ বলার গুরুত্ব

আউযুবিল্লাহ বলার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন,

  • আউযুবিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাই।
  • আউযুবিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকি।
  • আউযুবিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই।

আউযুবিল্লাহ বলার সময়

আউযুবিল্লাহ বলার সময় “আউযুবিল্লাহি মিনাশ-শাইত্বানির-রাঝিম” বাক্যটি বলা হয়। এই বাক্যটি উচ্চারণের সময় “আউযুবিল্লাহি” শব্দটি উচ্চারণের সময় হাতের তালু দিয়ে মুখ ঢেকে নেওয়া সুন্নত।

বিসমিল্লাহ বলার গুরুত্ব

বিসমিল্লাহ বলার অনেক গুরুত্ব রয়েছে। যেমন,

  • বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করছি এবং তাঁর সাহায্য ও রহমত কামনা করছি।
  • বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমাদের কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হয়।
  • বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে শয়তান আমাদের কাজে বাধা দিতে পারে না।

বিসমিল্লাহ বলার সময়

বিসমিল্লাহ বলার সময় “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম” বাক্যটি বলা হয়। এই বাক্যটি উচ্চারণের সময় প্রতিটি শব্দের উপর জোর দিতে হবে।

আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ এর মধ্যে পার্থক্য

আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ দুটি ভিন্ন বাক্যাংশ। আউযুবিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা পাই এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকি। বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করছি এবং তাঁর সাহায্য ও রহমত কামনা করছি।

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম: কিছু FAQs

বিসমিল্লাহের অর্থ কী?

বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিমের অর্থ হল “পরম করুণাময়, অসীম দয়াবান আল্লাহর নামে”।

বিসমিল্লাহ কখন বলা উচিত?

বিসমিল্লাহ প্রত্যেক ভালো কাজ শুরু করার আগে বলা সুন্নত। যেমন, খাবার খাওয়ার আগে, গোসল করার আগে, ওযু করার আগে, ঘুমাতে যাওয়ার আগে, নতুন কোনো কাজ শুরু করার আগে ইত্যাদি।

বিসমিল্লাহ না বলার দোষ কী?

বিসমিল্লাহ না বলার কারণে একটি হালাল খাদ্য হারাম হয়ে যেতে পারে, আবার বিসমিল্লাহ না বলার কারণে নিয়ত শুভ থাকলেও অনেক কর্মে বরকত না হওয়ায় অনেকসময় ব্যাক্তির অসন্মানিত হতে হয়।

বিসমিল্লাহের সঠিক উচ্চারণ কী?

বিসমিল্লাহের সঠিক উচ্চারণ হল “বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম”। এই বাক্যাংশটি উচ্চারণের সময় প্রতিটি শব্দের উপর জোর দিতে হবে।

বিসমিল্লাহের কিছু উপকারিতা কী কী?

বিসমিল্লাহ বলার অনেক উপকারিতা রয়েছে।
যেমন,
বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করছি এবং তাঁর সাহায্য ও রহমত কামনা করছি।
বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে আমাদের কাজে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতারিত হয়।
বিসমিল্লাহ বলার মাধ্যমে শয়তান আমাদের কাজে বাধা দিতে পারে না।

কোন সূরাতে বিসমিল্লাহ নেই

পবিত্র কুরআনের ৯ নং সূরা “আত-তাওবা” ব্যতীত অন্য ১১৩টি সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ রয়েছে। এটি কুরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাক্যাংশ যার অর্থ “পরম করুণাময়, অসীম দয়াবান আল্লাহর নামে”।

উপসংহার

বিসমিল্লাহ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদেরকে আল্লাহর কাছে নিয়ে যায় এবং আমাদের ভালো কাজে সাহায্য করে। আমরা সকলেই আমাদের জীবনে বিসমিল্লাহের গুরুত্ব বুঝতে পারি এবং প্রতিনিয়ত বিসমিল্লাহ বলার চেষ্টা করি।