১০ বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া
বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কুরআন-সুন্নায় অসংখ্য দোয়া ও আমলের বর্ণনা রয়েছে। এসব দোয়া ও আমল পরীক্ষিত ও কার্যকর। বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মুমিন মুসলমানের উচিত এসব দোয়া ও আমল যথাযথভাবে পালন করা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক দিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে এই দোয়াটি পাঠ করলে কোনো কিছুই কারো ক্ষতি করতে পারবে না: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মায়াসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস-সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।’ অর্থ: ‘আল্লাহর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ)

হজরত আবু মুসা আশআরি (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী করিম (সা.) যখন কোনো গোষ্ঠীর হাতে ক্ষতির আশঙ্কা করতেন, তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম। অর্থ, ‘হে আল্লাহ! আমরা তোমাকেই তাদের মুখোমুখি করছি এবং তাদের অনিষ্টতা থেকে তোমারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’ (আবু দাউদ ও নাসাই)

হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে বলতে শুনেছি, মানুষের ওপর কোনো বিপদ এলে যেন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা দোয়া পাঠ করে, তখন আল্লাহতায়ালা তাকে তার বিপদ দূর করে দেন এবং সে যা কিছু হারিয়েছে, তার বদলে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করেন।’

রাসুলুল্লাহ (সা.) বিপদের সময় পাঠ করতেন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হাজিমুল হালিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি-ওয়া রাব্বুল আরশিল কারিম।’ এর অর্থ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি পরম সহিষ্ণু ও মহাজ্ঞানী। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি মহান আরশের প্রভু। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি আকাশমণ্ডলী, জমিন ও মহাসম্মানিত আরশের প্রভু।’ (সহিহ্ বুখারি ও মুসলিম)

কঠিন বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

বিপদের সময় মহানবী (সা.) দোয়াগুলো উম্মতদেরও পড়তে বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।’ (দোয়া ইউনূস) এর অর্থ, ‘একমাত্র তুমি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩,৫০০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো এলাকায় মহামারি (সংক্রামক ব্যাধি) ছড়িয়ে পড়লে তোমরা যদি সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর বাইরে থাকলে তোমরা আক্রান্ত এলাকায় যাবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ আর সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া হলো ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’। এ ছাড়াও পড়তে পারেন সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার।

আরও পড়ুন : সকল প্রকার বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া আরবিতে

১। সুরা আল-ফাতেহা

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ - الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ - مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ - إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ - اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ - صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সুরা আল-ফাতেহা পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ সুরাটি আল্লাহর গুণ-প্রশংসার সুরা হওয়ায় এ সুরার আমলের দ্বারা ঝাঁড়-ফুক করাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

২। ‘আল্লাহু… আল্লাহু রাব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইআ’

اَللهُ... اللهُ رَبِّىْ لَا اُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় লাভ করা যায়।

৩। ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমিন’

لَا اِلَهَ اِلَّا اَنْتَ سُبْحَانَكَ اِنِّى كَنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা ও রহমত লাভ করা যায়।

৪। ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নেমাল ওয়াকিল; নেমাল মাওলা ওয়া নেমান নাছির’

حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيْل – نِعْمَ الْمَوْلِى وَ نِعْمَ النَّصِيْر

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা বৃদ্ধি পায়।

৫। ‘লা হাওলা ওয়া লা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’

 لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إلَّا بِالله

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভ করা যায়।

৬। ‘আস্তাগফিরুল্লাহ; আস্‌তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলায়হি’

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ – أَستَغْفِرُ اللهَ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার ক্ষমা লাভ করা যায়।

৭। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল আজিমুল হালিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আজিম; লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরদি ওয়া রাব্বুল আ’রশিল কারিম’

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ، وَرَبُّ الْأَرْضِ، وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার আশ্রয় লাভ করা যায়।

৮। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন দ্বালায়িদ দাইনি ওয়া ক্বাহরির রিজাল’

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَ أَعُوذُ بِكَ مِن ضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়া যায়।

৯। ‘ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বয়ূ-মু বিরাহমাতিকা আস্তাগিছ’

يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيْثُ

বিপদ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে এ দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর। এ দোয়াটি পড়লে আল্লাহ তাআলার সাহায্য লাভ করা যায়।

১০।  ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি; ত্বারফাতা আইন; ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু; লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা।

হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে-
اَللّهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَاتَكِلْنِىْ اِلَي نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَ أَصْلِحْ لِيْ شَانِي كُلُّهُ لا اِلَهَ اِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাহমাতাকা আরঝু ফালা তাকিলনি ইলা নাফসি; ত্বারফাতা আইন; ওয়া আসলিহলি শানি কুল্লুহু; লা ইলাহা ইল্লাহ আনতা। (আবু দাউদ, মিশকাত)


অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার দয়া কামনা করি। তুমি আমাকে এক মুহূর্তের জন্যও আমার নিজের হাত ছেড়ে দিও না। বরং তুমি স্বয়ং আমার সমস্ত ব্যাপার ঠিক করে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নাই।